• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

উৎসব আমেজে জমজমাট হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের নির্বাচনী প্রচারণা

  • ''
  • প্রকাশিত ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :

 দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি। এ নির্বাচন ঘিরে এখন প্রার্থীরা প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর মাত্র কয়েকদিন দিন বাকি। সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রাম জেলার ১৬ আসনেও নির্বাচনী পরিবেশ বেশ সরব হয়ে উঠেছে। প্রার্থীরা তৎপর নিজের পক্ষে ভোটার টানতে। প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তাঁদের মূল লক্ষ্য অধিকসংখ্যক ভোটারকে কেন্দ্রে নিয়ে আসা।

পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার তৈরি, মাইকিংসহ নেতাকর্মীদের চা-নাস্তা খরচের নামে প্রার্থীরা হাতখুলে অর্থ ব্যয় করছেন। আর এর প্রভাব পড়ছে কিছু ব্যবসায়। বিশেষ করে ছাপাখানা, চায়ের দোকানের ব্যবসা এখন রমরমা।

নগরীর ছাপাখানার গুরুত্বপূর্ণ স্থান আন্দরকিল্লা, সিরাজউদৌলাহ রোড, কদম মোবারক, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচনী পোস্টার, লিফলেট ও ব্যানার তৈরিতে ব্যস্ত কর্মচারীরা। এসব এলাকায় রয়েছে ৩০০টির বেশি ছাপাখানা। এগুলোতে কর্মচারীরা নির্বাচনী পোস্টার, লিফলেট ছাপানো ও ব্যানার তৈরির কাজে ব্যস্ত। এছাড়া বেড়েছে মাইক-সাউন্ড সিস্টেমের ভাড়া ও বিক্রি। প্রচারের কাজে ব্যবহৃত বাহনগুলোরও কদর বেশ বেড়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্তদের জন্য এলাকায় খাবারের আয়োজন করা হচ্ছে। অলিগলির প্রতিটি চা- নাস্তার দোকান এখন নির্বাচনী আড্ডায় মুখরিত।

 

এদিকে নির্বাচন ঘিরে প্রেস পাড়া খ্যাত আন্দরকিল্লার ছাপাখানাগুলোতে এখন দিন-রাত কাজ চলছে। বেচাকেনা বেড়েছে কাগজ-কালিসহ প্রিন্টে ব্যবহৃত নানা উপকরণের।

নগরীর অলি-গলিতে বেড়েছে চা-নাস্তার দোকানে ভিড়। চায়ের দোকানে নির্বাচনী আড্ডায় মেতেছেন ভোটাররা। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে কোলাহল ও ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা ততই বেড়ে চলেছে।

অনেক রাত পর্যন্ত সরগরম থাকছে দোকান। একাধিক প্রার্থীর নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভিড় লেগেই আছে।

মাইকেরও কদর বেড়েছে, প্রচারণার প্রধান হাতিয়ার মাইক ও সাউন্ড বক্সের কদরও বেড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী মজুদ করছে মাইক, সাউন্ডবক্সসহ নানা যন্ত্রপাতি।

চাহিদা বেড়েছে প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত মিনিট্রাক ও সিএনজি চালিত অটো রিকশা ।

এইদিকে প্রচারণায় চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে প্রতিদিনই স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের মিছিল ও গণসংযোগে বাড়ছে কর্মী- সমর্থকদের ভিড়। এ আসনে নৌকার প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুত্র, কয়েকদিন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা গিয়াসের মিছিলে সক্রিয় না থাকলেও তবে এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন ইউনিয়নের নবীন-প্রবীণ নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াসের মিছিলে অংশ নিচ্ছেন। দু'পক্ষের প্রচারে ভোটের লড়াই বেশ জমে উঠেছে। একই অবস্থা চট্টগ্রাম- ২ (ফটিকছড়ি) আসনে। এখানে আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী লড়াই হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তরমুজ প্রতীকের হোসাইন আবু তৈয়ব। প্রতিদিনই ফটিকছড়ির প্রত্যন্ত অঞ্চল ও গ্রামে গ্রামে এই দুই প্রার্থীর সরব উপস্থিতিতে জমে উঠছে চট্টগ্রাম উত্তরের এই আসনে ।

এইদিকে চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে নৌকা প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতার পক্ষে রয়েছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে থাকা নেতাকর্মীরা। তবে সাবেক নেতারা রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল উদ্দিন চৌধুরীর পক্ষে। দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে নির্বাচনী উত্তাপ তাই এখন তুমুল জমজমাট। অপরদিকে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ডে) নির্বাচনী প্রচারণায় তেমন উত্তাপ নেই। এখানে দলীয় প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অনেকটা নিরুত্তাপ সীতাকুণ্ড আসনের প্রচারণা। একই অবস্থা আনোয়ারা, রাউজানেও।

এদিকে, মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ সাবেক চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) সংসদীয় আসনে

নির্বাচনে জোটের কারনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী সোলাইমান শেঠ কে আসনটি ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

কিন্তু নির্বাচনের মাঠে  রয়ে গেছে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী চট্টগ্রাম নগর আওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক ও সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম এবং  নগর আওয়ামীলীগের সদস্য বিজয় কুমার চৌধুরী।এই দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে নেমেছে আওয়ামীগের দ্বিধাবিভক্ত দুই অংশ।

ইতিমধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে মিটিং- মিছিল করে তাদের স্ব -স্ব অবস্থান স্পষ্ট করেছে।  প্রথমে নগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আ. জ.ম নাছির উদ্দীন, বর্তমান এমপি নোমান আল মাহমুদ ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এস এম সেলিম,  দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বোয়ালখালী পৌর মেয়র জহুরুল ইসলাম জহুর  তাঁর  অনুসারীদের নিয়ে বোয়ালখালীর একটি কমিউনিটি সেন্টার নগর আওয়ামীলীগের সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কুমার চৌধুরীর ফুলকপি মার্কার পক্ষে মিটিং করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন।

পরে এই গ্রুপে যোগদেন বোয়ালখালী আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম সহ কয়েক জন। পরে ২৬ ডিসেম্বর  একই কমিউনিটি সেন্টারে নগর আওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক আব্দুস ছালামের কেটলি মার্কার পক্ষে মিটিং করে নগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, বোয়াল পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি শফিউল আলম, সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া  দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের  বন গবেষণা সম্পাদক আবছার উদ্দীন সেলিম সহ কিছু নেতাকর্মী। দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এস এম আবুল কালাম ও তার অনুসারীদের নিয়ে সমর্থন দিয়েছে নগর আওয়ামীলীগের স্বতন্ত প্রার্থী আবদুস ছালামের কেটলি মার্কার  পক্ষে। এই দুই গ্রুপ যখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে  তাদের  প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে তখন এই আসনের জোট মনোনীত প্রার্থী সোলাইমান শেঠ নাঙ্গল  প্রতীকের প্রচারণা করার জন্য আওয়ামীলীগের  কাউকে দায়িত্ব নিয়ে প্রকাশ্যে নির্বাচনী  মাঠে না-নামার  অভিযোগ করেছেন জোট প্রার্থী সোলাইমান শেঠ।

শহরের আসন চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী ) নৌকা প্রার্থী

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রতিদিনই গণসংযোগ করছেন। তার পক্ষে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ এবং মহানগর আওয়ামী লীগ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই আসনে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র তাই জলাবদ্ধতা নিরসন, নতুন খাল খনন, রাস্তাঘাট প্রশস্তকরণ, সুষ্ঠু পরিকল্পনা অনুযায়ী এলাকাটিকে গড়ে তোলার দাবি স্থানীয়দের। এই আসনে রয়েছে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জের মতো বাণিজ্যিক এলাকা। এই এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

সেখানে প্রতিদিন ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। তবে এই আসনের অন্য প্রার্থীদের প্রচারণা খুব একটা বেশি দেখা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনে নৌকা প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর চ্যালেঞ্জ স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মনজুর আলম এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদ। এ দুজন নির্বাচনী মাঠে থাকায় নৌকার ভোটব্যাংক বিভক্ত হবে আশঙ্কা করছেন নেতারা। তবে এ তিন প্রার্থীর প্রচারণায় জমে উঠেছে নগরীর ডবলমুরিং আসনের নির্বাচনের আমেজ। চট্টগ্রাম মহানগরীর আসনগুলোর মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি আলোচনায় চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর) এ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য এমএ লতিফের দুর্গে এবার দলের একটি অংশের সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। নৌকার প্রার্থী সংসদ সদস্য এমএ লতিফ হেভিওয়েট হলেও আসনটি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে সাবেক মেয়র নগর আওয়ামীলীগের  আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ  মহানগর আওয়ামী লীগের একাংশের প্রত্যক্ষ সমর্থন দিচ্ছেন। ফলে লতিফ এবং সুমন দুজনের প্রচারণার দিকে দৃষ্টি নগরবাসীর। অপরদিকে আলোচনার শীর্ষে থাকা চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে প্রতিদিনই নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা চলছে। নানা অভিযোগে অনুযোগে প্রচারও চলছে সমানতালে। চট্টগ্রাম -১৫ (সাতকানিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নদভীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতালেবও চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার। সাতকানিয়ার নৌকার প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশ এবং ঈগল প্রতীকের মোতালেবের পক্ষে আরেকটি অংশ সরাসরি অবস্থান নেওয়ায় তুমুল উত্তেজনায় চলছে প্রচার ও গণসংযোগ। একই অবস্থা চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে। সেখানে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বিভিন্ন কারণে সমালোচিত। সেটিকে ইস্যু করে ভোটের মাঠে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে ঈগল মার্কার প্রার্থী মুজিবুর রহমান। যতই দিন ঘনিয়ে আসছে বাড়ছে ততই নির্বাচনী আমেজ । ছোট খাট সংঘর্ষ, ভাঙচুর অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগ থাকলেও থেমে নেই প্রচারণা ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads